Thursday |
বালিশের পাশে রাখা ফোনটার আর্তনাদে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। মোবাইল হাতে নিতেই দেখল জয়ার ফোন।
ধুৎ!! সারাদিন মেয়েটার জ্বালায় বাচাই মুশকিল।ফোন রিসিভ না করেই রেখে দিলাম।রিসিভ করলে আমার ঘুমের ১২টা বাজবে। আবার কল কেটে দিলে আমার উপর ১৪৪ ধারা জারি হবে। তাই রিসিভ করলামনা। রিসিভ না করাতে আরও কয়েকবার ফোন করল। আমি ঘুমাচ্ছি আর ঘুমাচ্ছি।
হঠাৎ আমার মুখের উপর কে জানি ১জগ পানি ঢেলে দিল।১ লাফে উঠলাম বিছানা থেকে।ঘুম ঘুম চোখে সামনে থাকাই দেখি জয়া দাঁড়িয়ে আছে জগ হাতে নিয়ে।বুঝলাম মাইয়া আমার উপর এমন আক্রমণ করছে।ইচ্ছা করছিল গলা চেপে মেরে ফেলি।কিন্তু পারলামনা।
আমি আবির।জয়া আমার কলেজ ফ্রেন্ড,শুধু ফ্রেন্ডনা বেস্ট ফ্রেন্ড।আমার সুখ দুঃখের সাথি।আমার বাসার থেকে কয়েক মাইল দূরেই জয়ার বাসা।
-কয়টা বাজে? (জয়া)
-তুর ইচ্ছা হলে তুই দেখ কয়টা বাজে।(আমি)
-তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হ।
-জ্বি মহারাণী।
ফ্রেশ হতে ৫ মিনিট পর আসলাম জয়ার সামনে।
-চল।( জয়া)
-চল মানে।নাস্তা করব তো।
-দূর তোর নাস্তা।চল।
মাথা পুরাই খারাপ হয়ে গেল।সারাদিন মনে হয় আজ না খেয়েই কাটাতে হবে।
ও আপনাদের তো বলা হয়নি, আজ জয়ার সাথে শপিং করতে যাচ্ছি। জানি আজ পকেটের ১২টা বাজবে। একথা ভাবতে ভাবতে আবার মন খারাপ।
-ঐ একটা রিকশা ডাক।(জয়া)
-আমি পারবনা তুই ডাক।
-বাঁদরামি করিস নাতো।
এই যে রিকশা। যাবেন?
-কোথায় জাবেন?(রিকশা)
-শপিং কমপ্লেক্স।
-উঠুন।
রিকশায় উঠলাম।দুজনে চুপ।রিকশায় থাকতে রিকশা ভাঁড়া ভাগ করে নিলাম।
দুজনে চুপ করে মলে ডুকলাম।মেয়েটা একের পর এক জিনিস কিনতে লাগল।আমার জন্য দুএকটা শার্ট কিনলাম। তারপর ঢুকলাম জয়া জন্য ১টা শাড়ি কিনতে।দোকানদার একগাদা শাড়ি বের করল।
-কোনটা ভাল হবে?(জয়া)
-তুই নিজেই পছন্দ কর।
-কেন তুই করে দেনা।।
-আমি জানি না,কোনটা ভাল,কোনটা খারাপ।
-তুই দেখি কোন দিন গারলফ্রেন্ড নিয়া শপিং করতে পারবিনা।
-পারবনা মানে? এখন কি করছি?
-এখন করছিস মানে?
-মানে কিছু না।
এবার শাড়ি কিনে যখন বিল দিতে গেলাম বিল লিস্ট দেখে চোখ আমার কপালে। একটা ৬ এর পাশে এত গুলা শুন্য কেন।ধুর মাথা আবার খারাপ হয়ে গেল।পকেট থেকে টাকা বের করতে গিয়ে জয়া বলল
-থাম।আমি দিচ্ছি।
-তুই দিবি মানে।(মুখে বললাম মনে কিন্তু তার উল্টো।)
-হ্যাঁ আমি দিব।
-তুই দিবি জানলে ত আমি র কয়েকটা শার্ট কিনতাম।(ছোট স্বরে)
-কিছু বললি?
-কই না তো।
-আচ্ছা চল এবার।
-হুম চল।
সেদিনের মত চলে আসলাম বাসায়।
মেয়েটাকে খুব ভালবাসি।কিন্তু কোনদিন বুঝতে দিইনা। যদি সে রাগ করে।প্রতিটা দিন এভাবে কাটায় তার সাথে।কিন্ত কোনদিন বলতে পারিনা যে “জয়া তোকে ভালবাসি খুব ভালবাসি”।প্রতিটা রাতে আপন মনে ভাবি যে তাকে কালই বলে ফেলব বুকে চেপে রাখা ভালবাসার কথা। কিন্তু সকাল হলেই মনে পড়ে সেই আতঙ্কের কথা যদি জয়া আমাকে একসেপ্ট না করে,যদি দূরে চলে যায় সারাজীবনের জন্য তাহলে আমি কখনো নিজেকে ক্ষমা করতে পারবনা।জয়াও হয়ত আমাকে ভালবাসে, সে আমাকে বুঝতে না দিলেও আমি প্রতি তার কেয়ার দেকে বুঝে যায়। হয়ত সেও একি কারণে আমাকে বলেনা ভালবাসি।কিন্ত আমি একদিন ভাবলাম থাকে আজ বলেই দিব ভালবাসার কথা।দূরে যদি চলে যায় যাক তবুও আমি রেহাই পাব এই বালিশ চাপা কান্না থেকে।
পার্কে বসে বসে একথা ভাবতে ভাবতে চোখ ভিজে উঠল। কল দিলাম জয়াকে।
-হ্যালো।জয়া?
-হুম বল।
-তুর সাথে একটা কথা ছিল।
-কি কথা বল?
-আসলে আমি তোকে ভাল....(পুরটা বলতে পারলামনা)
-থেমে গেলি যে?
-সামনা সামনি বলতে চাই।
-আচ্ছা তুর বাসাই আসছি?
-না তুই পার্কে আয়।
-আচ্ছা।
অপেক্ষা করতে লাগলাম জয়ার জন্য।কখন আসবে জ্যা,তাকে বলব না বলা সব ক্তহা।কিন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয় এখনো জয়া আসলনা কেন? একটা ফোন দিব।না থাক হয়ত জ্যাম এ পরছে।কিন্ত হঠাৎ দেখি জয়া কল দিল।
-হ্যালো।(আমি)
-কে আবির সাহেব বলছেন?
-হ্যা।আপনি কে? জয়ার ফোন আপনার কাছে কেন।
-আমি সিটি হসপিটাল থেকে বলছিলাম।জয়ার এক্সিডেন্ট হ্যেছে।তার ফোনের লাস্ট কলে আপনার নাম্বার ছিল,তাই আপনাকে কল দিলাম।
একথা শুনে যেন আকাশ থেকে পরলাম।
-আচ্ছা আমি আসছি।
কয়েক মিনিট পর হাসপাতালে পৌছলাম।গিয়ে দেখি জয়া শুয়ে আছে একটা বেডে। ডাক্তার তার চিকিৎসা করছিল। প্রচণ্ড কষ্টে মেয়েটা বেহুশ হয়ে পড়ে রইল।সেই রাত হসপিটালে কাটালাম।পরদিন জয়ার অবস্থা খারাপ দেখে ডাক্তার আবার তার চিকিৎসা শুরু করল।কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বলল জয়ার পক্ষে আর বাচা সম্ভব নয়।
-আমি কি তার সাথে দেখা করতে পারব?(আমি)
-হুম
এক দৌড়ে গেলাম জয়ার কাছে।
-আমি আর বাচবনা?
-তোকে আমার জন্য বাচতে হবে।আই লাভ ইউ।
-আমিও তোকে খুব ভালবাসি রে।
বুকে নিয়ে আকড়ে ধরে আছি জয়াকে। সেও আমাকে আকড়ে ধরে আচে।কিন্ত তা কয়েক মুহূর্তের জন্য। কিছুক্ষন পর আমার মনে হল সে আর আমাকে জড়িয়ে ধরছেনা।আর বলছেনা “আবির তোকে খুব ভালবাসি।“ তাহলে কি আমার জয়া......... না না একি ভাবছি জয়া এভাবে চলে যেতে পারেনা।কিন্তু মেনে নিতে হল যে জয়া অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছে। যে দেশের ঠিকানা “কবর” । আজও অপেক্ষায় আছি জয়া আসবে বলে।জানি এ অপেক্ষার শেষ নেই।তবু আমার মনে হয় হয়ত জয়া এখনি আসবে...৷৷