Thursday |
বক্সিং রিংয়ে তাঁর হাত দুটো চলত বিদ্যুৎগতিতে। অনেকে বলেন, এর চেয়েও বেশি চলত মোহাম্মদ আলীর মুখ। গ্লাভস হাতে ঘুষি দেওয়ার আগে কতজনকে স্রেফ কথায় ঘায়েল করে দিয়েছেন কিংবদন্তি বক্সার। প্রবল পরাক্রমশালী সেই দুটি হাতের জোর হারিয়েছিলেন অনেক আগেই। পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হয়ে হারিয়েছিলেন স্বাভাবিক চলাফেরার শক্তিও। এসব রোগবালাই নিয়েই হাসপাতালে নিত্য আসা-যাওয়াও চলছিল। ৭৪ বছর বয়সে ভোগান্তিই তো!
অবশেষে সব ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেলেন কিংবদন্তি বক্সার মোহাম্মদ আলী। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পরশু ভর্তি হয়েছিলেন অ্যারিজোনার ফিনিক্স-এরিয়া হাসপাতালে। আর ফেরা হলো না সেখান থেকে। গতকাল রাতে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ক্রীড়াবিদ।
তাঁর মৃত্যুসংবাদ নিশ্চিত করে পরিবারের মুখপাত্র বব গানেল বলেছেন, পারকিনসন্স রোগের সঙ্গে ৩২ বছরের লড়াইয়ের পর আলী আজ (গতকাল) ৭৪ বছর বয়সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।
১৯৪২ সালের ১৭ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি রাজ্যের লুইসভিলে জন্ম। বাবা ক্যাসিয়াস মারসেলাস ক্লে’র নামানুসারে প্রথমে নাম রাখা হয়েছিল ক্যাসিয়াস মারসেলাস ক্লে জুনিয়র। পরে ১৯৭৫ সালে ইসলাম গ্রহণের পর নিজেই মোহাম্মদ আলী নাম বেছে নেন।
১৯৬৪ সালে বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপে সনি লিস্টনকে হারিয়ে সারা পৃথিবীতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন ২২ বছরের ক্যাসিয়াস ক্লে। পরের প্রায় ২০ বছর বক্সিংয়ের রিংয়ে রাজত্ব করেছেন বিশাল দাপটের সঙ্গে, ক্যাসিয়াস ক্লে থেকে হয়ে উঠেছেন কিংবদন্তি মোহাম্মদ আলী! জো ফ্রেজিয়ারের সঙ্গে ‘ফাইট অব দ্য সেঞ্চুরি’, ‘থ্রিলা ইন ম্যানিলা’, জর্জ ফোরম্যানের সঙ্গে ‘রাম্বল ইন দ্য জঙ্গল’ সহ আরও কত স্মরনীয় লড়াই।
চলে গেলেন মোহাম্মদ আলী
সনি লিস্টনকে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিলেন, পরে জিতেছেন আরও দুইবার। তিনবার হেভিওয়েট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা প্রথম বক্সারও মোহাম্মদ আলী। জিতেছেন ক্যারিয়ারে মোট ৬১টি লড়াইয়ের ৫৬ টিতেই!
শুধু রিংয়েই নয়, রিংয়ের বাইরেও তাঁর মুখ চলত সমান তালে। সরব ছিলেন নিপীড়িত মানুষের অধিকারের দাবিতে। প্রথমবার বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার মাত্র ৩ বছর পর তাঁকে ভিয়েতনাম যুদ্ধে পাঠানোর চেষ্টা করেছিল আমেরিকান সরকার। কিন্তু আলী তা সরাসরি প্রত্যাখান করে বলে দিয়েছিলেন, তিনি ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিপক্ষে ৷ কোনো অবস্থাতেই তাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে করবেন না-এটাও জানিয়ে দিয়েছিলেন স্পষ্টভাবে।
মাঠে ও মাঠের বাইরে অসাধারণ ব্যক্তিত্ব দিয়ে হয়ে উঠেছিলেন দারুণ প্রভাবশালী একজন। স্পোর্টস ইলাস্ট্রাটেড তাঁকে সম্মানিত করেছিল গত শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াবিদ হিসেবে। বিবিসি চোখে হয়েছিলেন শতাব্দীর সেরা ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব। আর সারা বিশ্বের ক্রীড়াপ্রেমীদের অনেকের কাছে তো তিনি সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদই। ‘দ্য গ্রেটেস্ট’ নামটা তো সে কারণেই!
মৃত্যু তাঁকে অন্য এক ভুবনে নিয়ে গেছে। কিন্তু এই ভুবনের তিনি তাঁর কীর্তি দিয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন চিরকাল।